বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:১১, ৬ জুন ২০২৪

আপডেট: ১০:১৭, ৬ জুন ২০২৪

বিচ্ছেদের কতদিন পর নতুন প্রেমে জড়াবেন

বিচ্ছেদের কতদিন পর নতুন প্রেমে জড়াবেন

‘আর উই ডেটিং দ্য সেম পারসন’ নামে ফেসবুক গ্রুপে একজন নাম প্রকাশ না করে নিজের একটি অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। তাঁর ভাষাতেই বিষয়টি তুলে ধরা হলো:


‘আমি শুধু আপনাদের সঙ্গে আমার একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিতে চাই। দীর্ঘ ছয় বছরের সম্পর্কের পর আমার প্রেমিক কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আমি সেই সময় সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ি। মূলত সময় কাটানোর জন্যই টিন্ডারে (ডেটিং অ্যাপ) অ্যাকাউন্ট খুললাম। দ্বিতীয় ম্যাচেই আমি একজনকে খুঁজে পেলাম। সে তার মা–বাবার সঙ্গে অন্য একটা দেশে থাকে। ফলে আমরা অনলাইনে চ্যাটিং, ডেটিং শুরু করলাম। তারপর সত্যি সত্যি বিষয়টা ঘটে গেল। সে আমার কথা তার পরিবারকে জানাল। তার পরিবার আমার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সম্মতি জানাল। আমিও আমার পরিবারকে তার কথা জানালাম। ওরা দেশে এল। আমরা বিয়ে করলাম। কখনো ভাবিনি, ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে জীবনসঙ্গী খুঁজে পাব। আমরা খুব ভালো আছি। আমার মনে হয়, আমি জীবনে কখনোই এতটা খুশি ছিলাম না।’

অনেকেই এ পোস্টের নিচে এই দম্পতিকে শুভকামনা জানিয়েছেন।

প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর অনেকেই আগে ‘সেরে ওঠা’র জন্য সময় নিতে বলেন। নিজের সঙ্গে নিজের সম্পর্কটাই ভালোভাবে ঝালাই করে নিতে বলেন। তারপর নতুন করে সম্পর্কে জড়ানোর পরামর্শ দেন। তবে টাইম ম্যাগাজিনের অনলাইন সংস্করণে সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো, সবার জন্য সব ক্ষেত্রে যে এই সময় নেওয়াটা প্রযোজ্য, তা নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নতুন সম্পর্কই তাঁদের পুরোনো সম্পর্কের ট্রমা থেকে বের করে আনতে সাহায্য করে। সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও ডেটিং কোচ মাইশা ব্যাটেল বলেন, ‘মরিয়া হয়ে নিজের খারাপ সময়, দুঃখের সময় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা, নানা কিছু করা অনেক সময় নতুন সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে একটা বাধা। আবার নতুন সম্পর্কে নিজের সেরাটা দেওয়া, নতুন মানুষের সংস্পর্শে নিজের সেরা ভার্সন হয়ে ওঠা—একটা নতুন সম্পর্কই পারে আপনাকে সবচেয়ে সুন্দরভাবে সারিয়ে তুলতে। অনুপ্রাণিত করে নতুনভাবে প্রস্ফুটিত হতে।’

মাইশা আরও জানান, অনেকে যোগব্যায়াম করেন। বই পড়েন। সিনেমা দেখেন। আড্ডা দেন। বাগান করেন। নতুন কোনো কোর্স বা প্রজেক্টে যোগ দেন। এই সবকিছুর চেয়ে নতুন আরেকটি সম্পর্কই তাঁকে সবচেয়ে দ্রুত, সবচেয়ে ইতিবাচকভাবে পুনরায় জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে বেশি সাহায্য করে।

সম্পর্ক ভাঙার কষ্টের চেয়ে অন্য কোনো কিছুরই তুলনা চলে না। আর এটা কত দিনের সম্পর্ক, তার ওপর নির্ভর করে না। বরং নির্ভর করে সম্পর্কের গভীরতা আর নির্ভরতার ওপর। অনেকে একটা সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর বা ‘ওয়ার্কআউট’ না করলে সময় নেন। সচেতনভাবে নতুন সম্পর্কে যাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। নতুন সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে অপরাধবোধ কাজ করে।

তবে নতুন সম্পর্কে যাওয়ার আগে আপনি ঠিক কত দিন, কত মাস বা কতটা সময় নেবেন, এর আসলে কোনো মাপকাঠি হয় না। ভাঙা হৃদয়ের বিশেষ কোনো দাওয়াই নেই। গত এক দশকে থেরাপি বা কাউন্সেলিং বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ভাঙা সম্পর্কের শোক যেন নিজের ক্ষতি করতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করা বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথাসম্ভব কমিয়ে তাঁকে জীবনের মূল স্রোতে গতিশীল রাখা। তবে ভাঙা প্রেমের বিকল্প আরও ভালো প্রেম, আরও ভালো সম্পর্ক। আর সেটিই আপনার মানসিক স্বাস্থ্য সবচেয়ে ভালোভাবে দেখভাল করতে পারে। তাই নিজেকে প্রেম, ভালোবাসা থেকে ‘আইসোলেশন’–এ না রেখে হৃদয় উন্মুক্ত রাখাই সমীচীন।

টাইম ম্যাগাজিনের ইনস্টাগ্রামে এ পোস্টের কমেন্ট বক্সে একজন লিখেছেন, ‘জনপ্রিয় মতের পাশাপাশি ভিন্ন একটা দর্শন। তবে ব্যক্তিভেদে এটা সম্পূর্ণ আলাদা। মানে এক পোশাক যেমন সবার গায়ে লাগে না, তেমনি এক নিয়মও সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। আর প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে তো আরও নয়! এর মতো ব্যক্তিগত বিষয় খুব কমই আছে। নিজেকে জানতে হবে যে কোনটা আমার জন্য সেরা সিদ্ধান্ত।’

আরেকজন লিখেছেন, ‘আপনি সেরে ওঠার জন্য নিজেকে চাপাচাপি করবেন না। তবে পুরোনো সম্পর্কে নিজের ভুল খুঁজে বের করা, নিজেকে শুধরে নেওয়া জরুরি। এককথায়, নতুন সম্পর্ক আরও ভালোভাবে, সুন্দরভাবে, শক্তিশালীভাবে চালিয়ে নেওয়ার জন্য যা কিছু দরকার, সেই উপলব্ধি আপনার ভেতরে জন্মাতেই হবে। একটা সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আপনাকে নিজের “বেটার ভার্সন” হয়ে উঠতেই হবে। এর কোনো অন্যথা নেই। সেই যাত্রায় যদি একজন দারুণ সঙ্গী মিলেই যায়, তাহলে তো সেরা!’


সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়