শুক্রবার   ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ , ২০ পৌষ ১৪৩১

ইমামূল হাছান আদনান

প্রকাশিত: ১১:২২, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

তিউনিশিয়ার পথেই হাঁটছে কি বাংলাদেশ?

তিউনিশিয়ার পথেই হাঁটছে কি বাংলাদেশ?

তিউনিশিয়ায় অভ্যুত্থানের সময় পেরিয়েছে এক যুগেরও বেশি। এখনো অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের অস্থিরতা থেকে বের হতে পারেনি দেশটি। 

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় গত ৮ আগস্ট। এরপর প্রায় পাঁচ মাস হতে চললেও এখনো জনজীবনে স্বস্তি আনার মতো কোনো পরিবর্তন আসেনি। উন্নতি হয়নি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পর চার মাসে সারা দেশে ১৩৬১ খুন, ২৫৫টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। স্থিতিশীলতা ফেরেনি রাজনীতিতেও। বড় দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী পরস্পর পরস্পরের প্রতি চাঁদাবাজি ও ব্যাংক দখলের অভিযোগ তুলেছে। সম্প্রতি সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো বড় প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ব্যাংক খাতে অনাস্থা এখনো কাটেনি। বিদেশীরাও বড় কোনো বিনিয়োগ নিয়ে আসেননি। সরকার পরিবর্তনের পর দেশে গ্যাস খাতে অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলেও বিদেশী কোনো কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়নি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৯১ শতাংশ। এ সময়ে বাংলাদেশের অনুকূলে বিদেশী ঋণের অর্থ যে পরিমাণে ছাড় হয়েছে, ঋণ ও ঋণের সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে তার চেয়ে বেশি। দেশের বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে। অর্থনীতির চাকা এখানো ধীরগতিতে আছে।

বিপুল গণবিক্ষোভের মুখে ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি তিউনিশিয়ার স্বৈরশাসক জাইন এল আবিদিন বেন আলির পতন ঘটে। ২৩ বছর ধরে ক্ষমতা আটকে রাখা এ শাসকও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এ আন্দোলন পরিচিতি পেয়েছিল জেসমিন রেভল্যুশন বা জেসমিন বিপ্লব নামে। আরব বসন্তের সূচনাকারী সফল এ অভ্যুত্থানের এক দশকের বেশি সময় পেরোলেও তিউনিশিয়া এখনো দিশা খুঁজে পায়নি। অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনীতিতেও স্থিতিশীলতা ফেরেনি। অর্থনৈতিক সংকোচন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ খরা, বেকারত্ব, দুর্বল রিজার্ভসহ নানামুখী চাপের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে তিউনিশিয়া। বেন আলির পতনের পর এখন পর্যন্ত দেশটির শাসনক্ষমতায় পরিবর্তন এসেছে চারবার। কিন্তু কোনো সরকারই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। এ কারণে জেসমিন বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়া তিউনিশিয়ান তরুণরা দলে দলে দেশ ছেড়েছেন।

অভ্যুত্থানের পর পাঁচ মাসে তিউনিশিয়ার মতো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হওয়ার আশঙ্কাটি এখন দিনে দিনে আরো জোরালো হচ্ছে। অর্থনীতির মতো বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে রাজনীতিও। জাতীয় নির্বাচন ও আগামীর রাষ্ট্রক্ষমতার ধরন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের অভিমুখ নিয়ে মন্তব্য করার মতো সময় না হলেও শুরুটা ভালো হয়নি বলে মনে করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ মাসে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। আবার একেবারে নিরাশ হয়ে যাওয়ার মতোও কিছু হয়নি। তবে এ কথা মানতে হবে যে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ দুর্বল। রাজনৈতিক বিষয়ে এ সরকারের অভিজ্ঞতা খুবই কম। ছাত্ররা প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদকে বেছে নিয়েছে। আবার তারাই বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার জন্য সরকারের দায়িত্ব হবে অংশীজনদের সঙ্গে বেশি বেশি কথা বলা। বিরোধের জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধান করা।’

তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা দেশের মানুষ। শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনামলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখানো হলেও সেটি ছিল কর্মসংস্থানহীন। এ কারণে দেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব নিয়ে হতাশা বেড়েছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থার সর্বস্তরে অনিয়ম-দুর্নীতির সীমাহীন বিস্তারের কারণে সম্পদবৈষম্যও প্রকট হয়েছে। সুশাসনের তীব্র ঘাটতির কারণে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছে দেশের ব্যাংক খাত। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি এ খাতে নজিরবিহীন লুটপাটও সংঘটিত হয়েছে। সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়া বৈষম্য থেকে মুক্তির দাবিতেই গড়ে উঠেছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। কিন্তু সফল অভ্যুত্থানের পরও এখনো সেসব বৈষম্যের বিলোপ হয়নি। ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দেশের অর্থনীতির মৌলিক সূচকগুলোও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘বিগত সরকারের কর্মকাণ্ড বিবেচনায় রেখে এ সরকারের শক্তভাবে কাজ করার যে কথা ছিল, গত পাঁচ মাসে আমরা সেটি দেখিনি। এছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণ ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করার কিংবা জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের তালিকা তৈরি অথবা আহতদের পুনর্বাসনের কাজগুলোয়ও সফল হতে দেখিনি। অর্থনীতি ও সমাজ জীবনে সরকারের সফলতা দেখতে না পাওয়ায় সরকার সম্পর্কে এক ধরনের অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে। এটি বিপজ্জনক।’

তিনি আরো বলেন, ‘এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা ও কয়েকটি রাজনৈতিক দল এক ধরনের নির্বাচনী খায়েসের কারণে নানা রকম দৌড়-ঝাঁপের ফলে কে কার চেয়ে অধিক দ্রুত ক্ষমতায় যেতে পারবে এমন একটি সংকট রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে। যে স্বাধীনতা পাওয়া গেছে সেটিকে সুসংহত করতে যে রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োজন ছিল, সেটি এ সরকারের নেই। তবে আমি এখনো আশাবাদী। জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রে তারা যদি এ রাস্তা দেখাতে পারেন তাহলে তো ভালো। কিন্তু এতদিনে বিভিন্ন স্বার্থ এখানে ঢুকে যাওয়ায় ওই ঐক্যটি এখন নেই মনে হচ্ছে; যা অভ্যুত্থানের মূল আকাঙ্ক্ষা অর্থাৎ বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকে কঠিনতর করে তুলছে। বিরাজমান পরিস্থিতির ফলে এ দেশের পরিণতি তিউনিশিয়ার মতো হবে কিনা জানি না। তবে আমরা চাই না। এ অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার করার মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসুক।’

তিউনিশিয়ার জেসমিন বিপ্লব বেহাত হওয়ার অনেক উপসর্গই বাংলাদেশের সঙ্গে মিল আছে। ২৩ বছর ধরে দখল রাখা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর তিউনিশিয়ায় রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। সে সময় বেন আলি সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ ঘানৌচির নেতৃত্বে তার গঠন করা অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা সেভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভে নামছিল সাধারণ মানুষ। এক মাসের মধ্যেই সে সরকারেরও পতন হয়। সাইদ এসেবসির নেতৃত্বে গঠিত নতুন অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভাও সেভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

পরে ওই বছরের অক্টোবরে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাতে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে ইসলামপন্থী এন্নাদা পার্টি। কিন্তু পরে দলটির গৃহীত বিভিন্ন এজেন্ডা শেষ পর্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল, পশ্চাৎমুখী হিসেবে দেখা দিতে লাগল। দুই বছরের মাথায় আবারো শুরু হলো প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। এরপর ২০১৩ সালের শেষ নাগাদ আবারো রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে দ্রুত মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় এন্নাদা পার্টির সরকার। অস্থিরতার মধ্যে ২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করেন নতুন প্রেসিডেন্ট সাইদ এসেবসি। ২০১৯ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ পদে আসীন ছিলেন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক অস্থিতিশীলতায় তিনবার প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করতে হয়েছে তাকেও। বিপ্লবের শুরুর মাসগুলোয় সামাল দিতে না পারা টালমাটাল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, আর্থিক দুরবস্থা, বেকারত্বসহ সংকটগুলো থেকে আর বের হতে পারেনি তিউনিশিয়া।

প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালে দুর্নীতিবিরোধী প্লাটফর্মে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন কাইস সাইদ। মূলত তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সমর্থ হন তিনি। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছরের মাথায় ২০২১ সালে আবারো সাংবিধানিক সংকট তীব্র হয়ে দেখা দেয় দেশটিতে। সে সময় বেশকিছু মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাকে বরখাস্ত, কারফিউ জারি ও পার্লামেন্ট স্থগিত করার মতো সিদ্ধান্ত নেন দেশটির প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ। এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধানের কিছু অংশ স্থগিত করার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতাকেও জোরদার করেন, যাকে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো আখ্যা দিচ্ছে সাংবিধানিক অভ্যুত্থান হিসেবে।

পুনরায় চলতি বছরের অক্টোবরে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে জয়ী হন কাইস সাইদ। নির্বাচনে মাত্র দুই প্রার্থীকে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অনুমতি দেয়া হয়। যেখানে মাত্র ২৯ শতাংশ ভোটার অংশগ্রহণ করেছিলেন।

এখনো তিউনিশিয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসেনি। মূল্যস্ফীতি, খাদ্য ঘাটতি, উচ্চ বেকারত্বসহ মারাত্মক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে দেশটিকে।

বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের পর সাধারণ মানুষ এখনো সরকারের তরফে স্বস্তির বার্তা পায়নি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ড. ফাহমিদা খাতুন। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এ নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ ছিল মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেয়া। কিন্তু এ কাজে সরকার এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী সত্যিকার অর্থেই কষ্টে আছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সুদহার বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তার সুফল মিলছে না। তার মানে এখানে সমস্যাটি সরবরাহজনিত। সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক করার পাশাপাশি চাঁদাবাজি বন্ধ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কার্যকর উন্নয়ন ঘটাতে হবে।’

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বিরাজমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট অতীতের লিগ্যাসি। কয়েক বছর ধরেই দেশের অর্থনীতিতে নানামুখী সংকট চলছিল। এখন যেসব সংকট প্রকট আকারে দেখা যাচ্ছে, সেগুলো অতীতের লিগ্যাসি। ডলার সংকট, রিজার্ভের ক্ষয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ খরা, রাজস্ব ঘাটতি, সরকারের ঋণের বোঝা, ব্যাংক খাতের দুর্দশা, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের লুটপাট, অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন সংকটে অর্থনীতি হাবুডুবু খাচ্ছিল। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতাও শূন্যের কোটায় নেমে এসেছিল। এসব কারণেই জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। শ্রীলংকায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয় হলেও সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী ছিল। কিন্তু গত ১৫ বছরে আমাদের সব প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস হয়ে গেছে। এ কারণে এখানে সরকারের যেকোনো উদ্যোগের ফল পেতে সময় লাগবে।’

মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনার কথা বলে দুই বছর ধরে দেশে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ থেকে বাড়িয়ে প্রায় ১৬ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। নীতি সুদহার (রেপো রেট) ৫ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও এখনো মূল্যস্ফীতি না কমে উল্টো ঊধ্বর্মুখী রয়েছে। সর্বশেষ নভেম্বরেও দেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গড় মূল্যস্ফীতির চেয়ে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার আরো বেশি চড়া। নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ শতাংশে। সরকারের দেয়া এ তথ্য আমলে নিলে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখন সর্বোচ্চ।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলছেন, ‘২০২৪ সাল বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে কঠিন সময় গেছে। কয়েক বছর ধরে চলে আসা সংকটগুলো ঘনীভূত হয়ে এসেছিল। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সব সূচক চাপে ছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কিছু সংস্কারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে কিছু বড় ধরনের অনিশ্চয়তাও তৈরি হয়েছে। নির্বাচন, রাজনীতি, বিনিয়োগসহ সব ক্ষেত্রেই অনেক বেশি অনিশ্চয়তা। এ পরিস্থিতি থেকে দ্রুত বেরোতে না পারলে বাংলাদেশের জন্য ঘুরে দাঁড়ানো বেশ কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘আপাতত সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধির কোনো লক্ষণ দেখছি না। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর চাপ আরো বেশি বাড়ছে। এ শ্রেণীর মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও পড়ে গেছে। সরকার যদি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনে মানুষকে স্বস্তি দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তারা আবারো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। এতে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনীতিও আরো বড় অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।’

(বণিক বার্তা থেকে ইষৎ সংক্ষেপিত)

সর্বশেষ

জনপ্রিয়