সাকিব ছাড়াই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল
তামিমের মতো সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও কি এখানেই শেষ? কাল রাত পর্যন্ত যা খবর, সাকিবের বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা নিয়ে কোনো ইতিবাচক খবর পায়নি বিসিবি। এটাও বোঝা যাচ্ছে যে দল ঘোষণার আগে সেরকম কোনো খবর আসার সম্ভাবনাও নেই। এদিকে বিসিবি মনে করে না যে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বড় টুর্নামেন্টে খেলার মতো অবস্থায় আছেন তিনি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে তাই সাকিব থাকছেন না বলে নিশ্চিত করেছে বিসিবির একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র।
তাতে অবশ্য অকূল পাথারে পড়ে যাচ্ছে না গাজী আশরাফ হোসেনের নির্বাচক কমিটি। কারণ, এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সম্ভাবনা শুরু থেকে কমই ছিল। নির্বাচকেরা তাই অনেকটা সেভাবেই দল গুছিয়ে রেখেছেন। সাকিব, তামিম খেললে তখন তাতে কাটছাঁটের প্রশ্ন আসত। তবে হ্যাঁ, ওপেনিংয়ে তামিমের অভিজ্ঞতা আর অলরাউন্ডার সাকিবের একের ভেতর দুই সত্তাকে তো মিস করবেই বাংলাদেশ।
গত সেপ্টেম্বরে সাকিবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ইংলিশ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের ডিভিশন ওয়ানে সমারসেটের বিপক্ষে ম্যাচে। সারের হয়ে টন্টনের সে ম্যাচে ১১১ রানে হেরে গিয়েছিল সাকিবের দল। কিন্তু দুই ইনিংসে ৬৩ ওভার বোলিং করে সাকিব নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। ম্যাচের প্রায় দুই মাস পর জানা যায়, ওই ম্যাচে সাকিবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আম্পায়াররা।
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, আইসিসির কোনো অনুমোদিত কেন্দ্র থেকে বোলিং অ্যাকশনের বৈধতার ছাড়পত্র না পেলে সাকিব দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট ছাড়া কোথাও বোলিং করতে পারবেন না। এ অবস্থায় সাকিবকে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে নেওয়া হবে কিনা, সেটা একটা প্রশ্ন ছিল। বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে কোনো রকম অনিশ্চয়তা রাখার পক্ষে নয় বিসিবি। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হাইব্রিড মডেলের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ দল প্রথম ম্যাচ খেলবে ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিপক্ষে দুবাইয়ে। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে ২৪ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি পরের দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড ও স্বাগতিক পাকিস্তান। ১২ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষিত দলে যেহেতু ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিবর্তনের সুযোগ আছে, নির্বাচকেরা আপাতত সাকিবকে ছাড়াই দল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মাঝের সময়টাতে আবার পরীক্ষা দিয়ে যদি সাকিব অ্যাকশনের বৈধতা পান, তাহলেই কেবল সুযোগ হতে পারে তাঁর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে ঢোকার।
সে ক্ষেত্রে সাকিব তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটা গত বছর ভারত সফরেই খেলে ফেলেছেন কিনা, সেটা একটা প্রশ্ন। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের ওই সফরেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, অক্টোবরের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোম সিরিজে টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নেবেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাঁর সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। সাকিবকে ঘরের মাঠে খেলতে দেওয়ার ব্যাপারে এখনো সরকারি পর্যায় থেকে কোনো সবুজসংকেত নেই। তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি যেহেতু দেশের বাইরে, বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সমস্যা না হলে সেখানে তাঁকে জাতীয় দলের হয়ে খেলতে দিতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না।
কিন্তু ভবিতব্যই হয়তো এটা লিখে রেখেছে যে ক্যারিয়ারজুড়েই নানা রকম আলোচনার জন্ম দিয়ে যাওয়া সাকিবের শেষটাও হবে জল্পনা–কল্পনা দিয়ে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলুন বা না খেলুন, অবসরের ঘোষণা যেহেতু নিজ থেকে দেননি, তাঁকে নিয়ে এই জল্পনা-কল্পনা হয়তো চলতেই থাকবে।
২ ডিসেম্বর বার্মিংহামের অদূরে লাফবরো ইউনিভার্সিটির মেডিকেল বিভাগে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দেন সাকিব। ১০ ডিসেম্বর আসা ফলাফলে জানা যায়, তাঁর অ্যাকশন অবৈধ। অ্যাকশন নিয়ে কাজ করে ২১ ডিসেম্বর আবার পরীক্ষা দেন চেন্নাইয়ে। ফলাফল নেতিবাচক আসে এবারও। এরপর আর সাকিব বোলিং অ্যাকশনে কোনো পরীক্ষা দিয়েছেন বলে বিশ্বাসযোগ্যভাবে জানা যায়নি। দুবার অকৃতকার্য হওয়ায় সেটি দিলেও তিনি দেবেন আরও ভালো প্রস্তুতি নিয়ে। এ বিষয়ে সাকিবের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের সঙ্গে আছেন বলে জানা গেছে।