রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

প্রযুক্তি ডেস্ক:

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৬ মে ২০২৪

ইলেকট্রনের জন্য ‘৫ লেনের সুপারহাইওয়ে বানিয়েছে’ এমআইটি

ইলেকট্রনের জন্য ‘৫ লেনের সুপারহাইওয়ে বানিয়েছে’ এমআইটি

সম্প্রতি ইলেকট্রনের জন্য পাঁচ লেনের সুপারহাইওয়ে বানিয়েছেন ম্যাসাচুসেট্‌স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)’র পদার্থবিদরা, যা থেকে অতি-দক্ষ ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

৯ মে বৃহস্পতিবার তাদের এ আবিষ্কারের বিস্তারিত প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ। আর এটি যে গবেষণা সিরিজের অংশ, সেখানে পেনসিলের সীসা (গ্রাফাইট)-এর একটি বিশেষ রূপও তুলে ধরা হয়েছে।

“কম ক্ষমতার ইলেকট্রনিক ডিভাইসের জন্য আবিষ্কারটি সরাসরি প্রভাব ফেলবে। কারণ, এতে ইলেকট্রনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সময় কোনো শক্তি হারিয়ে যায় না। অন্যদিকে, গতানুগতিক উপাদানে এমনটি হয় না, যেখানে বিভিন্ন ইলেকট্রন এলোমেলো অবস্থায় থাকে,” বলেন এমআইটি’র পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও এ গবেষণায় সংশ্লিষ্ট লেখক লং জু।

এক্ষেত্রে কল্পনা করা যেতে পারে এমন সব গাড়ির কথা, যেগুলো ব্যস্ত পাড়ার তুলনায় খোলা মহাসড়কে মসৃণভাবে চলছে।

হাইওয়েতে বিভিন্ন গাড়ি বাধা ছাড়া অবাধে চলাচল করলেও এর আশপাশের এলাকায় সেগুলোর গতি কমাতে বা গাড়ি থামানো লাগতে পারে। একইভাবে, নতুন উপাদানটি শক্তির ক্ষতি না করেই বিভিন্ন ইলেকট্রনকে গোছালো অবস্থায় চলতে সাহায্য করে।

এ যুগান্তকারী উপাদানকে ডাকা হচ্ছে ‘রম্বোহেড্রাল পেন্টালেয়ার গ্রাফিন’ নামে, যা দুই বছর আগে আবিষ্কার করেছেন জু ও তার গবেষণা দল।

“আমরা একটা সোনার খনি খুঁজে পেয়েছি। আর প্রতিটি স্তরেই নতুন কিছু তুলে ধরছে এটি,” বলেছেন জু, যিনি এমআইটি’র ‘ম্যাটিরিয়ালস রিসার্চ ল্যাবরেটরি’র সঙ্গেও সম্পৃক্ত।

গত বছরের অক্টোবরে ‘নেচার ন্যানোটেকনোলজি’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে উঠে এসেছিল, রম্বোহেড্রাল গ্রাফিনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেয়েছে গবেষণা দলটি।

এর উদাহরণ হিসেবে গবেষকরা দেখিয়েছেন, এটি বিভিন্ন উপাদানের প্রান্তের আশপাশে ইলেক্ট্রনের মসৃণ চলাচলে সাহায্য করতে পারলেও মাঝপথে তা পারে না, যার ফলে তৈরি হয়েছে একটি সুপারহাইওয়ে। তবে, এজন্য পৃথিবীর চেয়েও শক্তিশালী চুম্বক প্রয়োজন।

তবে, সর্বশেষ এ গবেষণায় কোনো চৌম্বক ক্ষেত্র ছাড়াই সুপারহাইওয়ে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি গবেষকদের।

গ্রাফাইট সাধারণত পেন্সিলের সীসা হিসেবে পরিচিত, যা গ্রাফিনের বিভিন্ন স্তর নিয়ে গঠিত। আর এতে কার্বন পরমাণুর শিট সাজানো থাকে ষড়ভুজাকার প্যাটার্নে, যা দেখতে খানিকটা মৌচাকের মতো।

আর ‘রম্বোহেড্রাল (স্ফটিক পদ্ধতি) গ্রাফিন’ পাঁচটি স্তরে গঠিত, যা এক বিশেষ ধরনের ক্রমে সাজানো থাকে।

২০২১ সালে এমআইটি’তে তৈরি বিশেষ এক ধরনের অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে রম্বোহেড্রাল গ্রাফিনকে আলাদা করেছেন জু ও তার সহকর্মীরা, যা খুব দ্রুতই কোনো উপাদানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যকে একটি ন্যানোস্কেলে পরিমাপ করতে পারে।

তাদের গবেষণা করা পাঁচ স্তরওয়ালা রম্বোহেড্রাল গ্রাফিনটির পুরুত্ব ছিল এক মিটারের একশ কোটি ভাগের কয়েক ভাগ।

সর্বশেষ এ আবিষ্কারের জন্য গবেষণা দলটি এর মূল সিস্টেমে ‘টাংস্টেন ডিসালফাইড (ডব্লিউএস২)’র একটি বাড়তি স্তর যোগ করেছে।

“ডব্লিউএস২ ও পেন্টালেয়ার রম্বোহেড্রাল গ্রাফিনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার ফলে এই পাঁচ লেনের সুপারহাইওয়েটি শূন্য চৌম্বক ক্ষেত্রের মতো কাজ করে,” ব্যাখ্যা করেন জু।

“কোনো নতুন সিস্টেমে এ ধরনের ঘটনা আবিষ্কার করা প্রথম কেউ হওয়াটা খুবই রোমাঞ্চকর। বিশেষ করে এমন উপাদানের ক্ষেত্রে, যা আমরা নিজেরাই আবিষ্কার করেছি।”

এ আবিষ্কার প্রচলিত বৈশ্বিক প্রযুক্তিকে আরও দক্ষ ও টেকসই করে তোলার পাশাপাশি কম-শক্তির ইলেকট্রনিক ডিভাইস উন্নয়নে বড় অগ্রগতি দেখাতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়