রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

প্রকাশিত: ১৯:২২, ৮ মে ২০২৪

আপডেট: ২০:৩০, ৮ মে ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন বর্জন করলেন সাংবাদিকরা

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন বর্জন করলেন সাংবাদিকরা

তথ্য সংগ্রহে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন বর্জন করেছেন সাংবাদিকরা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখতে ঢাকায় এসেছে সংস্থার দুটি প্রতিনিধি দল। তাদের সফরের বিষয়বস্তু ও নীতিগত কয়েকটি বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম মিলনায়তনে বুধবার এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। 

বেলা আড়াইটার দিকে ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে আসেন। এ সময় অর্থনীতিবিষক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরমের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান।

হাবিবুর রহমান বলেন, “সপ্তাহে এক দিন সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্রিফ করা হবে। সেদিন আপনারা ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারবেন। এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গভর্নর।”

মিলনায়তনে উপস্থিত শতাধিক সাংবাদিক এর বিরোধিতা করেন। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক তখন বলেন, “আমরা সাংবাদিকরা এটা মেনে নিতে পারলাম না। পেশাগত দায়িত্ব পালনে আগের মত প্রবেশাধিকার চাই। সেটা না হওয়ায় আমরা সংবাদ সম্মেলন বর্জন করলাম।”

সেখান থেকে বেরিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল ভবনের সামনে অবস্থান নেন সাংবাদিকরা। এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আবুল কাশেম বলেন, “সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব, সাংবাদিকদের ইউনিয়ন, বিটভিত্তিক সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমরা আলোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করেছিলাম গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের কাছে। সেটা না হওয়ায় সংবাদ সম্মেলন বর্জন চলবে। পরবর্তী কর্মসূচি আমরা অতি দ্রুত ঘোষণা করব।”

গত ২৬ এপ্রিল প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল ভবনের সামনে অবস্থান নেন সাংবাদিকরা।

তখন গভর্নরের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেছিলেন, “সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সাংবাদিকরা ব্যাংকের নির্দিষ্ট অনুমতিপত্র (প্রবেশ পাস) নিয়ে শুধু মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন। কোনো কর্মকর্তা যদি সাংবাদিকদের পাস দেন, তারা শুধু সেই কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। তবে আগের মতো অবাধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বিভাগে যাওয়া যাবে না।”

গভর্নরের নিষেধাজ্ঞার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব ভবনের নিচতলায় অভ্যর্থনা বিভাগে রাখা রেজিস্ট্রার বইয়ে পরিচয় লিখে সই করে বিশেষ ‘পাস’ নিয়ে ভেতরে যেতে পারতেন গণমাধ্যমকর্মীরা। অস্থায়ী এ পাস ব্যাংক থেকে বের হওয়ার সময় ফেরত দিয়ে আসতে হত।

প্রায় দেড় মাস ধরে গভর্নরের নির্দেশে এ পাস দেওয়া বন্ধ রয়েছে। সাংবাদিকরা কোন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন, সেটিও নজরদারি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চার ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালকসহ সব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে অলিখিত নির্দেশনা দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর কয়েকদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। তখন প্রতিবাদের মুখে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধাহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের করণীয় নির্ধারণে ইআরএফ-এর সভাপতির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে সংগঠনটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন অবস্থানের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব), সম্পাদক পরিষদ, ইআরএফ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) নিন্দা জানিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা স্বাধীন সাংবাদিকতা, গণতন্ত্র এবং মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি বলে মনে করে এসব সংস্থা ও সংগঠন। 
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়