রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ১০:৫১, ৯ মে ২০২৪

পণ্যমূল্য বাড়ার ইঙ্গিত দিলেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা

পণ্যমূল্য বাড়ার ইঙ্গিত দিলেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা

ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালুর শুরুতেই টাকার বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। এতে পণ্যমূল্য বৃদ্ধিসহ মুদ্রাস্ফীতি আরো খারাপের দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশের বড় আমদানিকারকরা। 

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পদক্ষেপের ইতিবাচক দিকও তুলে ধরেছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে এ পদ্ধতি চালু করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন রফতানিকারকরা।   

দেশের শীর্ষ আমদানিকারক মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিদেশী মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্যবর্তী দর এক লাফেই ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হলো। ডলারের এ বিনিময় হারে শুল্ক বৃদ্ধিসহ সব আমদানি পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতিকেও উসকে দেয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।’

ক্রলিং পেগ পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্যবর্তী দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে এ দরের আশপাশে স্বাধীনভাবে লেনদেনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পক্ষান্তরে ডলারের মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন দেশের বড় ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ডলারের বিষয়ে ব্যাংকগুলো কি আগেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলতে পেরেছে? কেন্দ্রীয় ব্যাংক তো আর ব্যাংকগুলোকে ডলার দেবে না। এক্সপোর্টারদের (রফতানিকারক) কাছ থেকে তাই বেশি দামে ডলার নিতে হয়। এখন যে বলা হচ্ছে ১১৭ টাকায় থাকার কথা, এক্সপোর্টাররা তো চাইবে তা আরো বাড়িয়ে নিতে। ঠিক এ জায়গাটাই আমাদের কাছে কিন্তু পরিষ্কার হচ্ছে না। এদিকে রেমিট্যান্সের ইস্যু আছে, এটা কীভাবে ভারসাম্যে আনা হচ্ছে? পক্ষান্তরে ক্রলিং পেগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডলারের রেট বাড়ায় আমাদের ব্যয় বেড়ে যাবে নিশ্চিতভাবে।’ 

ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নের কারণে আমদানির পাশাপাশি উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ইস্পাত খাতের প্রতিষ্ঠান এইচএম স্টিল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মোহাম্মদ সরওয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘ডলারের মূল্য এক লাফে ৭ টাকা বাড়াটা আমাদের জন্য বড় চাপ। এর প্রভাব বাজারে কীভাবে পড়বে সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে এমন পদক্ষেপে আমাদের কস্টিং বাড়বে, আমদানিতে বড় লোকসান হবে। আরেকটা কথা হলো, যে দর ঠিক করা হয়েছে সেটা কার্যকর থাকছে কিনা। এখন ব্যাংক যদি এর চেয়ে বাড়তি নেয় তার প্রভাব আরো খারাপ হবে, যেমনটা আগে থেকেই হয়ে আসছে। এ পদ্ধতিটি যেহেতু দেশে একেবারে শুরুর দিকে তাই আরো কয়েকদিন গেলে এর প্রভাব ভালোভাবে অনুধাবন করা যাবে।’ 

ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার বিষয়টিকে অনেক উদ্যোক্তা আবার ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। তবে সেক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়েছেন তারা। টি কে গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তফা হায়দার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার এমন পদক্ষেপকে আমি নেতিবাচকভাবে দেখছি না। কন্ট্রোল করে আসলে সমাধান পাওয়াটাও কঠিন। রফতানিকারকরা তো এ বাজার থেকে অনেক দূরে। তারা হয়তোবা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক মূল্যটা পাচ্ছে না, যার কারণে বায়ারদের কাছ থেকে অর্ডার নেয়াটাও তাদের কাছে এক ধরনের চ্যালেঞ্জের। এটা ঠিক যে আমদানির সাইডে এ পদক্ষেপ একটা ঝাঁকুনি তৈরি করতে পারে।’ 

বাজারের ওপর ডলারের বিনিময় হার ছাড়ার ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি জানিয়ে মুস্তফা হায়দার বলেন, ‘এমন প্রস্তুতি দরকার যে কোন প্রডাক্টগুলো আমাদের জন্য বেশি প্রয়োজনীয় কিংবা কোনটা কম। কোনটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর কোনটা কমার্শিয়াল—এসব ভালোভাবে যাচাই করে আমদানি কন্ট্রোলে এনে চাহিদাকে যাতে আরো কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এভাবে এগিয়ে তারপর ধাপে ধাপে ল্যান্ডিং দিলে ভালো হতো। অর্থাৎ সাপ্লাই আর ডিমান্ড যদি কিছুটা মিট করা যায় তাহলে ব্যাপারটা আরো অনেক সহজ হতো। মূলত সাপ্লাই আর ডিমান্ডের গ্যাপ ধরতে পারলে ম্যানেজ করাটা সহজ হয়। আমার বিশ্বাস দীর্ঘমেয়াদে এমনিতেই সাপ্লাইয়ে ইমপ্রুভ করবে। প্রকৃত অর্থে ডলারের দরের কথা যদি বলি, কোনো বেঞ্চমার্কই তো আজ পর্যন্ত কাজ করেনি। আমরা তো চিন্তামুক্তভাবে কাজ করতে পারছি না। যে ম্যানেজ করতে পারছে সে কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারছে। আর যে পারছে না সে স্লো হয়ে যাচ্ছে।’

আইএমএফের চাওয়া অনুযায়ী বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার জন্যই মূলত ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তকে বেশ ইতিবাচকভাবেই দেখছেন দেশের রফতানিকারকরা। 

শীর্ষ পর্যায়ের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়েল গ্রুপের পরিচালক ও বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপটিকে বেশ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। কারণ এতে  রফতানিতে সুযোগ আরো বাড়বে। বায়ারদের সঙ্গে দরকষাকষির জায়গায় আরো ভালো অবস্থানে যাওয়া যাবে। তবে প্রত্যাশা থাকবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গিয়ে মানুষের জীবনধারণে খরচ যেন না বাড়ে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো শক্তিশালী তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলবে বলে আশা রাখছি।’

সর্বশেষ

জনপ্রিয়