নগদ পেল ডিজিটাল ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন
বাংলাদেশে প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে চূড়ান্ত লাইসেন্স পেল ‘নগদ লিমিটেড’। এর মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ।
তফসিলি ব্যাংকের তালিকায় যুক্ত করে সোমবার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর অনুমোদন সংক্রান্ত একটি পত্র নগদ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর এ মিশুকের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম, পরিচালক (বিআরপিডি) মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী, অতিরিক্ত পরিচালক মনিরুল ইসলাম।
নগদের পক্ষে ছিলেন কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল হক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও চিফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার শেখ শাবাব আহমেদ।
তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘‘দেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে লাইসেন্স পাওয়াটা একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার।”
ডিজিটাল ব্যাংকের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, “গ্রাহকদের আর ব্যাংকে আসতে হবে না, বরং ব্যাংকই মানুষের হাতে হাতে ঘুরবে। কোনো রকম জামানত ছাড়াই আমরা সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ প্রদান করব। পাশাপাশি ক্ষুদ্র সঞ্চয় স্কিম চালুসহ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন লেনদেন সংক্রান্ত সকল সমস্যার সমাধান দেবে ডিজিটাল ব্যাংক।’’
ব্যাংকিং কবে নাগাদ চালু হবে তার নির্দিষ্ট তারিখ না জানাতে পারলেও তিনি দ্রুত সেবা শুরুর কথা জানিয়েছেন।
কেন ডিজিটাল ব্যাংক
নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনা ও লেনদেন আরও সহজ করতে সরকারের ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
বেশ কয়েক বছরের প্রস্তুতি শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্সের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু করে গত বছরের জুন থেকে। ২৫ অক্টোবর ৫২টি আবেদনের মধ্যে আট প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রথম ধাপে অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলো হল নগদ, এসিআই এর ‘কড়ি’, কয়েকটি ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগ ডিজি টেন, ব্র্যাকের উদ্যোগ বিকাশ ও ব্যাংক এশিয়ার উদ্যোগ ডিজিটাল ব্যাংক লিমিটেড।
শুরুতে এই পাঁচ ডিজিটাল ব্যাংকের সেবা পর্যালোচনার পর আরও তিনটিকে কার্যক্রম শুরুর জন্য লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কীভাবে কী সেবা
নীতিমালা অনুযায়ী ডিজিটাল ব্যাংকের একটি প্রধান কার্যালয় থাকবে বাংলাদেশে। এই কার্যালয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও সার্পোট স্টাফদের দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি সশরীরে বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে গ্রাহকের অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির কাজটি এই কেন্দ্রীয় দপ্তরে হবে।
কিন্তু ডিজিটাল ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের মত সরাসরি কাউন্টারে গ্রাহকদের লেনদেন সেবা দিতে পারবে না। এ ব্যাংকের নিজস্ব কোনো শাখা, উপশাখা, এজেন্ট বা উইন্ডো থাকবে না। এমনকি নিজস্ব কোনো এটিএম/সিডিএম/সিআরএম বা স্পর্শযোগ্য ইনস্ট্রুমেন্ট থাকতে পারবে না।ডিজিটাল ব্যাংকে গ্রাহক হিসাব খোলা হবে কেওয়াইসি পরিপালন করে অনলাইনে।
তাদের নিজস্ব কোনো এটিএম বুথ থাকবে না। হিসাব খোলার পর ভিন্ন কোনো ব্যাংক বা এমএএফএস এজেন্ট, এটিএম বুথ, সিডিএম, সিআরএম নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনলাইনে অর্থ স্থানান্তর এবং ব্যবহার করতে পারবে গ্রাহক। নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যাবে একই পদ্ধতিতে। লেনদেন সহজ করতে ভার্চুয়াল কার্ড, কিউ আর কোড বা অন্য কোনো অগ্রসর প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য চালু করতে পারবে ডিজিটাল ব্যাংক।
এই ব্যাংক দেশের ভেতরে যে কোনো পর্যায়ের গ্রাহককে ঋণ দিতে পারবে, তবে বৈদেশিক লেনদেনের সুযোগ থাকবে সীমিত। তবে তারা বিদেশ থেকে রেমিটেন্স গ্রহণ ও এফসি হিসাব পরিচালনা করতে পারবে।
এই ব্যাংক কারও পক্ষে পেমেন্ট বা পরিশোধকারী ব্যাংক হিসেবে কাজ করতে পারবে। বিদেশে লেখাপড়া, চিকিৎসা, ভ্রমণ বা অন্য কোনো প্রয়োজনে অনুমোদন সাপেক্ষে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করতে পারবে গ্রাহকের পক্ষে। তবে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঋণ, বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে মেয়াদি ঋণে অর্থায়ন করতে পারবে না।
এ ব্যাংক দেশের ভেতরে যে কোনো পর্যায়ের গ্রাহককে ঋণ দিতে পারবে। প্রান্তিক ও এসএমই খাতে ঋণ দিতে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে নীতিমালায়।