মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১ আশ্বিন ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:১২, ২৩ আগস্ট ২০২৪

কোনো কিছুরই দাম কমেনি

কোনো কিছুরই দাম কমেনি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নিত্যপণ্যের দাম কমেছে বলে যে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল তা সত্যি হয়নি দুই সপ্তাহ পরও। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে ভোক্তাদের অস্বস্তির মধ্যে রোববার অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ স্বীকার করেন, বাজারে চাঁদাবাজি থেমে নেই।

এসব ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। তবে ভোক্তারা এখনো সুফল পাননি। দাম কমার আভাস নেই বিক্রেতাদের কণ্ঠেও।

কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা আব্দুল জব্বার বললেন, “এখন পর্যন্ত মালের দাম আগের মতোই আছে। কোনো পরিবর্তন নাই।” একই সুর তেজকুনিপাড়া বাজারের পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা আকাশেরও।

তার ভাষ্যে, “দাম কমে নাই কোনো কিছুরই। বরং কিছু কিছু জিনিসের দাম বাড়ছে। বন্যার প্রভাবে সামনে আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে।”

শুক্রবার এই দুই বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেগুনসহ বেশ কিছু সবজির দাম বেড়েছে। কমেছে মরিচ আর শসার দাম। আর ক্রেতাদের আলু-পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে আগের দরেই।

তবে পাইকাররা জানালেন, সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে আলুর দাম কেজিতে কমেছে দুই টাকা। কিন্তু এক টাকাও কমেনি খুচরা বাজারে, আগের মতোই ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পাড়া-মহল্লার বাজারে।

কারওয়ান বাজারের আলু বিক্রেতা লাল মিয়া বলেন, “আমার আলু মুন্সীগঞ্জ থেকে আইছে। গত সপ্তাহে বিক্রি করছি ৫২ টাকা কেজি, আজ ৫০ টাকা করে বিক্রি চলতেছে।”

পেঁয়াজের দামের কোনো হেরফের চোখে পড়েনি। পাইকারিতে পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১১২ টাকা, ফরিদপুরের পেঁয়াজ ১০৪ টাকা। আর খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে।

ক্রেতাদের প্রতি কেজি রসুন কিনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। চীন ও ভিয়েতনামের আদা ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় মিললেও দেশি আদা কিনতে গুনতে হচ্ছে ৪৫০ টাকা।

গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি বেগুনের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা; মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।

বিক্রেতা আলাল চাঁন বলেন, “বেগুনের দাম এখন একটু বেশি। অন্য পণ্যেরও দামও বাড়তির দিকেই। বৃষ্টির কারণে অনেক জায়গায় মাল ঠিক মতো উঠাইতে পারে নাই।”

তবে বন্যার কারণে সবজির দামে খুব বেশি পভাব পড়েনি বলে দাবি এই ব্যবসায়ীর।

আলাল বলেন, “বাজারে বেশির ভাগ মাল আসে উত্তরবঙ্গ থেকে। আর সিলেট অঞ্চল, কুমিল্লা-ফেনী অঞ্চল থেকে যেসব মাল আসে, সেগুলোর হয়ত দাম বাড়ছে কিছু। কিন্তু খুব কম মাল আসে এই সাইট থেকে।”

স্বল্প মুনাফায় পণ্য বেচতে দোকান মালিক সমিতি নির্দেশনা দিয়েছে জানিয়ে এই বিক্রেতা বলেন, “তারা আপাতত দুই-তিন টাকা লাভ করার জন্য বলেছে৷ বেশি লাভ যেন কেউ না করে- সেদিকে নজর রাখতে বলছে। কারণ দেশের এই অবস্থায় মানুষের পাশে মানুষকে দাঁড়াতে হবে।”

বাজারে কাকরোল, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গার দাম বেশিই দেখা গেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে।

গাজর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে। আগের দরে বিক্রি হচ্ছে কাচা পেঁপে, ঢেঁড়স ও পটল; বিক্রি হিচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া প্রতি কেজি টমেটো ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা এবং লাউ প্রতিটি ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

দেশি শসার দাম কেজিতে কমেছে ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ১০০ টাকা করে বিক্রি হলেও শুক্রবার তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। আর হাইব্রিড শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে।

সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা করে কমে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে করলা ও ধুন্দল। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কুমড়াও। কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে কমেছে ৬০ টাকা, এখন প্রতি কেজি মিলছে ২৪০ টাকায়।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন আমদানি করা ভারতীয় কাঁচা মরিচই বেশি বিক্রি হচ্ছে। দেশি মরিচের পরিমাণ খুবই কম।

আমদানি না হলে মরিচের চরম সংকট দেখা দিবে বলে ভাষ্য ব্যবসায়ীদের।

গত সাত দিনে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দাম রাখা হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে, আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজি দরে।

জুলাইয়ের শুরুতে ও মাঝামাঝি সময়ে বাজারে চালের দাম বাড়ে দুই দফা। তাতে খুচরা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়।

বাজারে খুচরায় মিনিকেট চালের দর ৭১ থেকে ৭৫ টাকা কেজি, বিআর-২৮ এর দর ৬০ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পাইজাম ৬০ টাকা, হাইব্রিড মোটা চাল, গুটি স্বর্ণা ও গুটি ৫৩ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলেতে দাম এর চেয়েও বেশি।

কারওয়ান বাজারের চালের পাইকারি দোকান চাটখিল রাইস এজেন্সির বিক্রেতা নাইম হোসেন বলেন, “গত সপ্তাহের মতো সবকিছুর দাম একই আছে। দাম নতুন করে আর এখনও কমে নাই বা নতুন করে আর বাড়ে নাই।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়