গভর্নরের ঘোষণা, বড় খেলাপিদের সম্পদ বেচে টাকা উদ্ধার
বড় ঋণ খেলাপিদের দ্রুত চিহ্নিত করে দেশে তাদের সম্পদ বিক্রি করে টাকা উদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়ে ব্যাংকার্স সভার পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
আগের দিন দেশের খেলাপি ঋণ রেকর্ড ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার তথ্য প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই বিপুল পরিমাণ ঋণের অর্থ ফেরত না আসায় দেশের অর্থ ব্যবস্থা চাপের মধ্যে আছে।
গণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব পাওয়া আহসান মনসুর এই টাকা আদায়ে মূলত দুটি উপায়ের কথা বলেন। ব্যাংকিং খাত পুনরুদ্ধার করতে টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণাও দেন।
আহসান মনসুর বলেন, “ প্রথমে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে টাকা উদ্ধার করার চেষ্টা করা হবে। তারপর বাইরে থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। কিছুটা হলেও সাকসেসফুল হব।”
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে টাকা আদায়ের কৌশল ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “বড় বড় ডিফল্টারদের দ্রুত চিহ্নিত করে দেশের অভ্যন্তরে তাদের যত অ্যাসেট (সম্পদ) রয়েছে তা উদ্ধার করার চেষ্টা করা হবে।”
পাচার করা অর্থ ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্যক্তি দেশে আসবেন বলেও জানান গভর্নর। সম্পদ কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
“তারা যে টাকা পাচার করেছে সেগুলো ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে আইনগত সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সরকারের সাথে আলোচনা করা হয়েছে।”
অবশ্য পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা যাবে, এ বিষয়ে খুব বেশি আত্মবিশ্বাসীও না আহসান মনসুর। তিনি বলেন, “টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে উচ্চাশা করব না, তবে শক্ত হাতে কাজ করব। চেষ্টা করব সব টাকা ফেরত আনার।
“তবে কতটুকু পারব সেটা নিয়ে এখনি ভবিষ্যদ্বাণী করব না। ব্যাংকিং খাতের যে পুনরুদ্ধার সেটার জন্য আমাদের আগামীতে কয়েক বছর কাজ করতে হবে।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাইয়ে বেশি টাকা পাচার করা হয়েছে বলেও তথ্য প্রকাশ করেন গভর্নর। বলেন, “এসব দেশে বহু পরিবারের বাড়ি আছে। কেবল যুক্তরাজ্যেই একজনের ৫০০-৬০০ বাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে। আরও অনেকের এমন সম্পদ রয়েছে।”
ক্ষমতার পালাবদলের পর বেশ কিছু ব্যাংকে নতুন পর্ষদ দেওয়া হলেও ব্যবস্থাপনা পাল্টায়নি। আগের সরকারের আমলে ব্যবস্থাপনায় থাকা কর্মকর্তারা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “ব্যবস্থাপনাতেও পরিবর্তন আসবে। এসব ব্যাংকে নিরীক্ষা করা হবে। এরপর ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
“এসব ব্যাংক পুনর্গঠন করে একা চলবে, নাকি কারও সঙ্গে একীভূত হবে, সেই সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে। ছোট ব্যাংক হলে অবসায়নও হতে পারে।” তিনি বলেন, “ইসলামী ব্যাংকিংয়ের অর্ধেক টাকা নাই হয়ে গেছে। ১-২ বছর সময় লাগবে এসব ব্যাংক মেরামত করতে।”